ব্লাড ক্যান্সার (লিউকেমিয়া) – Blood Cancer লক্ষণ, কারণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
ক্যান্সারের সঙ্গা
ব্লাড ক্যান্সার (লিউকেমিয়া): চারটি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ক্যান্সারকে সুন্দরভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এগুলোর মাধ্যমেই জানা জাবে ক্যান্সার কোষ তাদের অনুরূপ অংশে কিভাবে কার্যক্রম চালায়।
ক. ক্লোনালিটি (Clonality): ক্লোনালিটি হল একইরূপ কোষগুচ্ছ তৈরীকরণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যান্সার একক একটি স্টিম সেল থেকে উদ্ভব হয়ে বহুভাগে বিভাজিত হয়ে একই রকমের মারাত্নক কোষের গুচ্ছে পরিণত হয়।
খ. অটোনমি (Autonomy): অটোনমি হল কোষের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা। এক্ষেত্রে কোষের বৃদ্ধি প্রাণরসায়নিক ও দৈহিক উদ্দীপনার দ্বারা ঠিকমত নিয়ন্ত্রিত হয় না।
গ. অ্যানাপ্লাস্টিক (Anaplastic): অ্যানাপ্লাস্টিক বলতে কোষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট নষ্ট হয়ে যাওয়াকে বুঝায়। কোষের পৃথকীকরণে স্বাভাবিক সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. মেটাষ্ট্যাসিস (Metasstasis): এক্ষেত্রে ক্যান্সার কোষগুলো তাদের অবিরাম বৃদ্ধি একস্থানে আবদ্ধ না রেখে দেহের অন্য একটি অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়।
ব্লাড ক্যান্সার (লিউকেমিয়া, Blood Cancer) কি?
ব্লাড ক্যান্সার এমন একপ্রকার অসুস্থতা যাতে রক্তকণিকার বিকাশের সমস্যার ফলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ (হোমিওস্টেসিস, রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ইত্যাদি) ব্যাহত হয়। এজন্য নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয়। ব্লাড ক্যান্সারের প্রধান প্রকারগুলি হল লিউকেমিয়া, মেলোমা এবং লিম্ফোমা। যেগুলি প্রত্যেকটি ক্যান্সারের দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন রক্তকণিকা, যথাক্রমে- শ্বেত রক্তকণিকা, প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা এবং লিম্ফোসাইটের আক্রান্ত হওয়ার কারণে হয়।
ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকোমিয়া (Leukemia) মানুষের রক্তের মাঝে থাকা শ্বেত রক্ত কণিকা গুলোকে আক্রমণ করে। শ্বেত রক্ত কণিকা সাধারণত আমাদের শরীরের অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। যেসব মানুষ লিউকোমিয়াতে ভোগেন তাদের রক্তের শ্বেত রক্ত কণিকাগুলো কার্যক্ষম হয় না। যার কারণে রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি খুব দ্রুতই ভয়ানক অবস্থায় চলে যেতে পারেন।
ব্লাড ক্যান্সার (লিউকেমিয়া)’র প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি ?
বিভিন্ন ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে উপসর্গ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু সবগুলোর মধ্যেই কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলো হল-
- নির্দিষ্ট কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া।
- অবসাদ বোধ বা অত্যধিক ক্লান্তিবোধ করা।
- মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বিশেষত: রাত্রিবেলায়।
- বারবার সংক্রমণ হওয়া।
- হাড়ে অথবা সন্ধিতে ব্যথা।
- ত্বকের চুলকানি যা থেকে সহজেই ক্ষত অথবা রক্তপাত হয়।
- ঘাড়, মাথা, কুচকি বা পেটে ফোলাভাব বা মাংসপিন্ড সৃষ্টি হওয়া।
ব্লাড ক্যান্সার (লিউকেমিয়া)’র প্রধান কারণগুলি কি কি ?
ব্লাড ক্যান্সার (লিউকেমিয়া) হয় মূলত ডিএনএ এর পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকত্বের কারনে। এই পরিবর্তনের কারণ সঠিকভাবে জানা যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে পারিবারিক ইতিহাস, লিঙ্গ, বয়স, জাতি বা অন্যান্য স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত অবস্থা এর জন্য দায়ী। কিছু তেজস্ক্রিয় ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এলেও এ রোগ হতে পারে।
কিভাবে ব্লাড ক্যান্সার (লিউকেমিয়া) নির্ণয় করা হয়
সাধারণত, ব্লাড ক্যান্সার (লিউকেমিয়া) ধরা পড়ে আকস্মিকভাবে যখন অন্য কোন রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়, অথবা ডাক্তার যখন কিছু উপসর্গের ভিত্তিতে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করার পরামর্শ দেন:
- রক্ত পরীক্ষা।
- পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্ম;
- এফবিসি- সম্পূর্ণ রক্ত গণনা;
- ভাইরোলজি টেস্টিং/ইনফেকশন স্ক্রিনিং;
- ইলেক্ট্রোলাইট ও ইউরিয়া ;
- লিভার ফাংশন টেস্ট;
- ইমিউনফেনোটাইপিং -ফ্লো সাইটোমেট্রি;
- সাইটোজেনেটিক টেস্টিং।
- লসিকাগ্রহ্নি ও অস্থিমজ্জার বায়োপসি।
- স্ক্যান।
- এক্স-রে;
- আল্ট্রাসাউন্ড;
- সিটি- কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি ;
- এমআরআই- ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং।